Saturday, October 22, 2016

রিকশাচালকের ছেলে মিরাজ যেভাবে হলেন আজকের ক্রিকেটার! পড়ুন তার জীবনের সেই গল্প!

বামনদের চাঁদ ধরতে মানা।মেহেদি হাসান মিরাজ কি কথাটা শুনেছিলেন??? শুনলেও হয়তো বিশ্বাস করেন নাই।আমার মনে হয়,আপনি বিশ্বাস করলেও মিরাজ আপনাকে বাধ্য করবে আজ থেকে কথাটা ভুলে যাইতে।কেমনে করবে মিরাজ???




চিন্তা করেন তো,ছেলে তার দেশের হয়ে ১ম ম্যাচ খেলতে নামলেন ।আরঅবতারণা হল কাল।মিরাজের বাবা যে রিকশাচালকই ছিলেন। ৩৩ ওভার বল করে ৬৪ রান দিয়ে ৫ উইকেটে নিয়ে আজ বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচিত মিরাজ। একজন রিকশাচালকের পরিবারে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টাটাই মুখ্য।পড়াশুনাটাই অনেকের কাছে বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে।ক্রিকেট তো অসম্ভের খাতায় নাম লেখায় সেখানে। মিরাজের বাবা তবুও চাইতেন,ছেলে পড়ুক।
এখন অভাব থাকলেও ওর ভবিষ্যৎ তো নিশ্চিত। কিন্তু ছেলের ভাবনা যে পুরোই উল্টা।ছেলে আজ এ পাড়া,কাল ও পাড়ার নিয়মিত খ্যাপ খেলোয়াড়।যদিও কাজটা বাবার অজান্তেই হয়।ধরা পড়লে মার জোটাটাই নিয়তি। মুস্তাফিজের বড় ভাই বোধহয় তার মতোই ফেমাস।৪০ কি.মি পাড়ি দেওয়ার রাস্তাটা তো সবার মুখে মুখে।মিরাজের বড় ভাই তা হয়তোবা করেন নাই,কিন্তু ক্রিকেটার মিরাজের বীজটা তার হাতেই বোনা।খুলনার মুসলিম একাডেমীতে তাকে ভর্তি করায় দেওয়ার মাধ্যমে।
যারা কিছু করতে পারে,একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই বোধহয় তারা থাকে।মিরাজের সেই সুযোগটা এসে যাওয়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকানোর প্রশ্ন কেন উঠবে???তাইতো পরের কিছুদিনের গল্পটা কেবলই সাফল্যের আর রূপকথাকে পাড়ি দেওয়ার। খুলনায় অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্ট হলে সেখান থেকে তার আয় ২৫০০০ টাকা।ভাবতেছেন,তিনি কেমন করলেন তা না বলে টাকার কথা কেন বলতেছি???

তাদের পরিবারের জন্য টাকাটাই যে বেশি দরকার ছিলো।তাইতো এ ঘটনার পরই তার বাবা জানায় দিলো,এতো যখন খেলতে ইচ্ছা,খেল। বাবার সমর্থন পাওয়ার পর আর আটকানোর তো প্রশ্নই উঠে না।অনূর্ধ্ব-১৫ ভাঙার আগেই তাই অনূর্ধ্ব-১৯ এর দলে।অভিষেকটা কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটেই।সালটা ২০১৩।প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা।
নেতৃত্ব বোধহয় জন্মগত।তাইতো অভিষেকের পরপরই ক্যাপ্টেন্সির গুরুভার তার কাঁধে।২০১৩ সালেই। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বদলের সূচনা তার হাতেই।২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগে তাই ফেভারিট ছিলো বাংলাদেশই।কারণ,ঘরে বাইরে দেশটা একের পর এক সিরিজ জয়ে তা বলতে বাধ্য করেছিলো।এক সাউথ আফ্রিকাই সিরিজ হেরেছে ২ বার।অধিনায়ক ছিলেন মিরাজই।ওহ হ্যা,ওই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বেস্ট ইলেভেনের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনিই। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ক্যাপ্টেন্সিটা মুখ্য না,মুখ্য হলো নিজে ভালো পারফর্ম করা।জাতীয় দলের জন্য নিজেকে তৈরি করা।সেখানে মিরাজ কেমন??

৫৬ ম্যাচে ৮০ উইকেট।দেশের মাঝে সর্বোচ্চ।দেশের সীমানা তুলে দিলেও মিরাজই প্রথম।মানে,বাং াদেশ ১ নাম্বারেই। ব্যাটিং-এ যদিও সেই তুলনায় অনেক খারাপ।৫৬ ম্যাচে ১৩০৫ রান।বিশ্বে ৮ম।অনেক খারাপ। রান তো অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে অনেকেই করেন।তাই এসবের কিছুই মিরাজকে বুঝাতে যথেষ্ট নায়।যদি না বলি,সেই রান উইকেটগুলো কিভাবে এসেছে। নেপালের সাথে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তার অনবদ্য ব্যাটিং-য়েই দল পায় জয়ের রাস্তা।ওয়েস্টইন ডিজের সাথে তার ব্যাটিংয়েই পেয়েছিলো লড়াই করার মতো পুঁজি।ব্রেকথ্রু এনে দিতে নিজেকেই নিয়ে আসেন তিনি।চাপ সামলানোর আশ্চর্য বড়ি খেয়ে যেন নামতেন মাঠে।দলের সেরা ফিল্ডারও তিনি।’সাকিবের ক্লোন’ কথাটা তো আর এমনি এমনি বলা হয় না।

কাল হয়তো তার অভিষেক হয়েই যাবে।জীবনঘড়ির ১৮ বছর ৩৬১তম দিনে দেশের জন্য টেস্ট ক্যাপটা নেওয়ার সময় হয়তো একটু নার্ভাস লাগবে,পর মুহুর্তেই তা উধাও হবে।চাপ সামলানোর জন্য তার যে জুরি মেলা ভার। আগামি ২৫ অক্টোবর ১৯-এ পা দিতে যাচ্ছেন তিনি।তার আগের দিনই টেস্ট ম্যাচ শেষ হবার কথা।নিজেকে জন্মদিনের সেরা উপহার দেওয়ার সু্যোগ সামনে।সু্যোগ সব মানুষকে বুঝায় দেবার,তিনি পারতেই এসেছেন। পারতে যে তাকে হবেই,বামনদের চাঁদ ধরার সুযোগটা যে তাকে দিয়েই।আপনাকে প্রবাদটা ভুল প্রমাণ করাতেও তিনি আজ পেরেছেন। ৩৩ ওভার বল করে ৬৪ রান দিয়ে ৫ উইকেটে নিয়ে আজ বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচিত মিরাজ।

No comments:

Post a Comment