Sunday, November 13, 2016

২৫০০ কোটি টাকা দিলে তবেই জামিন ডেসটিনির দুই কর্তার


ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা অথবা অন্য কোনোভাবে ২৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ করতে পারলে জামিনে মুক্তি মিলবে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের।
তাদের দুজনকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন
আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
আদেশে বলা হয়, ছয় সপ্তাহের মধ্যে ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ২৮০০ কোটি টাকা জমা দিতে হবে সরকারি কোষাগারে। ওই অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছেছে কি না তা আদালতকে জানাবে দুদক।
দুদকের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন জামিনে মুক্তি পাবেন।
গাছ বিক্রি করে তারা যদি ২৮০০ কোটি টাকা নাও পান, জামিনের জন্য ২৫০০ কোটি তাদের দিতেই হবে বলে আদেশে জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
গাছ বিক্রির বিষয়টি তদারক করবেন ডেসটিনির সিইও শামসুল হক ভূইয়া। রফিকুল আমীন জেলে যাওয়ার পর চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ শামছুল হক ডেসটিনির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন।
দুই আসামি যাতে কারাগারে বসেই গাছ বিক্রির জন্য স্বাক্ষর দেওয়ার এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানিকতা সারতে পারেন, সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে আদালতের আদেশে।
আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত ছয় সপ্তাহ সময় ও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করলে তবেই তারা জামিনে মুক্তি পাবেন।
ডেসটিনির দুই কর্মকর্তার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ১৯ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ৪৬ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
আর মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রোজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো।
দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাত করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা গত ২৪ অগাস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিযে এ দুই মামলায় আসামিদের বিচার শুরু করে।
অভিযোগ গঠন হওয়ার আগেই ট্রি প্ল্যান্টেশনের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ২০ জুলাই পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে হাই কোর্ট থেকে জামিন পান রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন।
এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে গেলে জামিন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর দুদকের আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে আপিল বিভাগ শর্তসাপেক্ষে জামিনের এই আদেশ দিল।
ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি দিয়ে ২০০০ সালে ডেসটিনি গ্রুপের যাত্রা শুরু। এক দশকের মধ্যে বিমান পরিবহন, আবাসন, কোল্ডস্টোরেজ, জুট মিল, মিডিয়া, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানি খুলে বসে এই গ্রুপ। কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে ২০ লাখের বেশি মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান কোম্পানির অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা, বাকিরা লাপাত্তা হয়ে যান।
ডেসটিনি গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসার মধ্যে একটি বড় বিনিয়োগ এসেছে ট্রি প্ল্যান্টেশনে। বান্দরবানের সদর উপজেলার সুয়ালক ও রাজবিলা এবং লামার ফাঁসিয়াখালী, ইয়াংছা, আজিজনগর ও ফাইতং এলাকায় ৮৩৫ একর জমিতে তাদের ৩৪টি বাগান রয়েছে বলে গণমাধ্যমের তথ্য।

No comments:

Post a Comment