আপু, আমার বয়স ২৯, আমার ২৪ বছর বয়সের একটা ছেলের সাথে রিলেশন হয়। সে আমার ভাগিনা হয় রিলেশনের দিক দিয়ে। প্রথমে তার সাথে খুবই বন্ধুর মত রিলেশন হয়, এখন সেটা প্রেমে গড়িয়ে যায়। আমার দুটো বাচ্চা আছে,বর বাহিরে থাকে।
তাকে আমি পাবো না জেনেই ভালবেসেছি, অনেকটা পাগলের মত। তাকে ঘিরে আমার কোন চাহিদা নেই শুধু ভালবাসাটুকু ছাড়া। সে-ও আমাকে ভালবাসে, ইদানিং কেমন যেন আচরণ করছে। সে খুবই ভালো ছেলে, সবাই তাকে ভালো পায়। সে-ও সবার কাছে আমার প্রশংসা করতো যা এখন করে না। সে দুরে সরে যেতে চাইছে কারণ হিসাবে সামাজিকতা আর পরিবারের কথা বলছে। তার ভয় কাজ করে যে এসব যদি জানাজানি হয় সবাই ভুল বুঝবে।
সে আমার খালাতো ননদের ছেলে, রিলেশন নষ্ট হবে দুই পরিবারের। সেটা আগে কেন সে ভাবলো না, এতটা কাছে আসার পর ভাবছে। আমার কিছু পাগলামি ছিল, যেমন সবসময় ওর খোঁজখবর নেয়া,সারাদিন কল দেয়া যা সে পছন্দ করেনা।এখন সে সবও করিনা। সে যেমন বলে তেমন করি। সে রিলেশনটা থেকে বের হতে চায়, সে বলে এতে দুজনের ভালো হবে।
আমি তো পারছি না আপু তাকে ভুলতে। মানছি এটা অন্যায়, এ সময়ে প্রেমটা সমাজ ভালো চোখে দেখবে না। আমি তো তাকে তেমন করে চাইছি না আপু, শুধু ভালবাসা ছাড়া। সংসার ছাড়বোনা আমি, এতটা পাগল নই আমি। সব ভালোবাসা এক নয়,কিছু ভালবাসার তো কোন নাম হয়না।
আপু,আমি তো অনেকটা ভালবেসেছি তাকে, কী করে বুঝাই তাকে। সে-ও তেমনটা আমাকে দেখিয়েছে। তাহলে এখন কেন এমন করছে।
আপনি বলেন, আপু কি করা উচিত আমার? তাকে তো ভুলতে পারবোনা, সমাধানের পথ কী, আপু?
প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন।
চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। আমাদের ফেসবুক পেজ দেখতে এখানে ক্লিক করুন। আর উত্তর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি, বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা। যে কোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের। আপনার হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো আমরা।
আপনার প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর।
আপনার জন্যই অপেক্ষায় আছি আমরা।
উত্তর
পরামর্শ: আমি সাধারণত জাজমেন্টাল টাইপের মানুষ নই, আপু। অনেক বড় বড় ধরণের বিষয়ও যেটা সমাজ মানে না, আমার কাছে নীতিগত দিক থেকে ঠিক মনে হলে আমি মেনে নিই। এবং পাশেও থাকি। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে আপু, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনি অন্যায় করছেন। প্রবল আর প্রচণ্ড অন্যায়। শুধু অন্যায় নয়, আপনি রীতিমতণ একটি নীতিবিরুদ্ধ কাজ করছেন। কেন জানেন? আপনি যদি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ছেলেটির সাথে বিয়ে করে সংসার করতে চাইতেন, আমি মোটেও আপনার নিন্দা করতাম না বোন। কারো সাথে মনের মিল না হলে ডিভোর্স দেয়াই যায়। কিন্তু আপনি কী চাইছেন? স্বামীর সংসার করবেন, স্বামীর টাকায় চলবেন, আবার সেই স্বামীকেই প্রতারণা করে প্রেমিকের সাথে পরকীয়া করবেন। প্রেমিক আবার কী? স্বামীরই ভাগ্নে হয় সে সম্পর্কে! যেখানে প্রেমিক নিজেই সরে যেতে চাইছেন, আপনি তাঁকে সরতে দিবেন না। আপনি আপনার অনৈতিক পরকীয়া চালিয়ে যাবেন!
জি হ্যাঁ, আপনি যে সম্পর্কটি চাইছেন, সেটাকে পরকীয়াই বলে। কে বলে কিছু সম্পর্কের নাম থাকে না? ওসব কেবল গল্প-উপন্যাসে হয়। বাস্তব পৃথিবীতে সব সম্পর্কের নাম থাকে। আর আপনি আপনার ভাগ্নের সাথে যে সম্পর্ক চাইছেন, সেটাকে পরকীয়া ও ব্যভিচার বলে। হ্যাঁ আপু, শুনতে কুৎসিত শোনালেও সেটাকে তাই বলে। আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন যে আপনার দুটি সন্তান আছে? যে ছেলেটি আপনাকে মামী ডাকে, তাঁর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক করে সন্তানদের চোখে কী প্রমাণ করতে চাইছেন আপনি নিজেকে?
অনেক বকা দিয়ে দিলাম, তাই না?
এখন একটু বুঝিয়ে বলি, প্লিজ মাথা ঠাণ্ডা করে শুনুন। আপনি এখানে একা, নিঃসঙ্গ। মানুষের মন মাত্রই একটা সঙ্গের জন্য আঁকুপাঁকু করে। আর যে আমাদের সঙ্গ দেয়, আমরা তাঁকেই ভালোবেসে ফেলি। আপনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়। আপনি নিঃসঙ্গ ছিলেন, ছেলেটি সুযোগ পেয়েছে... আপনার সাথে সম্পর্ক করেছে, কিছুদিন ভালো সময় কাটিয়েছে। এখন হয়তো অন্য কাউকে পেয়ে গিয়েছে যা সে চায় না। আপনার তরফ থেকে যতই সেটা তীব্র হোক, ছেলেটার দিক থেকে যে আপনার জন্য তেমন ভালোবাসা নেই, সে যে আপনাকে এভয়েড করতে চাইছে সেটা সহজেই বোঝা যায়। আচ্ছা বলুন তো, আপনাদের মাঝে কি শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে হয়েছে (আপনার চিঠির একটি লাইনের কারণে) যদি হয়ে থাকে, তাহলে জানবেন যে এই শারীরিক সম্পর্কের লোভেই সে সম্পর্ক করেছিল। ইচ্ছাটুকুন মিটে গিয়েছে, এখন সে আগ্রহী নয়। সে কখনোই চিরকাল আপনাকে ভালোবাসার চিন্তা করে সম্পর্ক করেনি।
একটা সহজ কথা বলি আপু-
সম্পর্ক সেটাই, যা দশ জনের সামনে বুক ফুলিয়ে বলা যায়। যে সম্পর্কে ভবিষ্যতের স্বপ্ন থাকে, বিয়ে করে ঘর বাঁধার আকাঙ্ক্ষা ও চেষ্টা থাকে। আপনার দুজনের কেউই তো বিয়ে করে ঘর বাঁধতে চান নাই। তাহলে এই সম্পর্ককে কীভাবে ভালোবাসা মনে হয় আপু আপনার? নিজের অবদমিত চাহিদা পূরণ আর ভালোবাসা তো এক হলো না! আর ভুলে যাবেন না যে আপনার স্বামী প্রবাসে এত কষ্ট করে উপার্জন শুধু নিজের জন্য করেন না, আপনি ও আপনার সন্তানের জন্যও করেন।
সমাধান একটাই, আপনাকে এই নোংরা জঘন্য পথ থেকে সরে আসতে হবে। আপনার কথা অনুযায়ী ধরে নিলাম যে ছেলেটি খুবই ভালো, সে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে সম্পর্ক করেনি। কিন্তু তাহলেও, ভালোবাসার মানুষের ভালো চিন্তা করে আপনাকে সরে যেতে হবে। আপনার তো এটাই চাওয়া উচিত যে ভালোবাসার মানুষ ভালো থাক, আপনি কীভাবে এত সেলফিশ চিন্তা করছেন বলেন তো?
আপনি বলেছেন না, ছেলেটি এখন আর কারো সামনে আপনাকে ভালো বলে না। কেন বলে না জানেন? কারণ তাঁর দৃষ্টিতে আপনি খুব ছোট হয়ে গিয়েছেন। আপনি বয়সে বড়, দায়িত্ব আপনার বেশি। ২৪ বছরের একটি ছেলের কাছে কোন সম্পর্কই সিরিয়াস না। আপনি স্বামীকে ফেলে ছেলেটার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করেছেন, সুতরাং ছেলেটি ধরেই নিয়েছে যে আপনার চরিত্র খারাপ। আর সেটা ধরেছে বলেই এখন আর সে প্রশংসা করে না!
শুনতে খুব খারাপ লাগলো? এটাই সত্য! যদি স্বামীকে ভালো না লাগে, তাঁকে ডিভোর্স করে নতুন জীবন শুরু করুন। তবুও তাঁকে ঠকাবার চেষ্টা করবেন না। কেননা যে প্রেমিকের কারণে স্বামীকে ঠকাবেন, সেই প্রেমিকই একদিন চরিত্রহীনা বলে ছেড়ে চলে যাবে। একটাই অনুরোধ আপু, এমন কোন কাজ করবেন না জাতে নিজের বিবেকের কাছে ঠেকা থাকতে হয়, নিজের সন্তানদের চোখে সম্মান হারিয়ে ফেলতে হয়। ছেলেটি আপনাকে ভালোবেসে ঘর করতে চাইলে একটা কথা ছিল, সে কিন্তু আর আপনাকে চায় না- এটা মনে রাখবেন প্লিজ!
No comments:
Post a Comment