Saturday, April 30, 2016
দাবদাহে স্বাস্থ্যরক্ষা || ডা. সজল আশফাক
বৈশাখের তীব্র দাবদাহে দেখা দিতে পারে নানা রকম অসুখ বিসুখ। এই সব অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে জ্বর, ডায়রিয়া, অবসাদগ্রস্ততা, সামার বয়েল বা ত্বকের ফোঁড়া, নাক দিয়ে রক্তপড়া, ঘামাচি ও হিটস্ট্রোক। তীব্র গরমে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন জ্বরে। জ্বরের সাথে হয় ডায়রিয়াও। জ্বরের মাত্রা একটু বেশি থাকে। ১০৩-১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে শরীরের তাপমাত্রা। তবে প্যারাসিটামলেই সেরে যায় জ্বর।
বৈশাখের তীব্র গরমে অধিকাংশ লোকই আক্রান্ত হয়ে থাকে অবসাদগ্রস্ততায়। সাথে অনেকেরই থাকে মাংসপেশীর খিঁচুনি। তীব্র দাবদাহে এ ধরণের শারীরিক সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। মাঝেমধ্যে স্যালাইন পানিও পান করতে হবে। এ ছাড়া ডাবের পানি কিংবা তাজা যে কোনো ফলের রস হলে তো আরো ভাল। কোনো কিছু না থাকলে পানির সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে কোনক্রমেই বাইরের খোলা শরবত খাওয়া উচিত নয়। বাইরের শরবত খেয়ে উল্টো পেটের পীড়া, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ নানা ধরণের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পানি পান পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে শরীর অবসাদগ্রস্ত লাগার পাশপাশি চোখ জ্বালাসহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেবে। এমনকি হিটস্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। হিটস্ট্রোক হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন প্রচণ্ড গরমের ফলে সৃষ্ট জটিলতায় রোগী অজ্ঞান হযে যায়। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি স্প্রে করতে হবে কিংবা ঢেলে শরীর ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হলেও এই কাজটি করতে হবে। রোগীর শরীরে যে পানির প্রবাহ দেয়া হবে তা ঠান্ডা হওয়ার দরকার নেই। এছাড়া রোগীর শরীরের পরিধেয় যতটুক সম্ভব খুলে ফেলতে হবে এবং ঘরের ফ্যান কিংবা এ.সি. চালিয়ে দিতে হবে। এসবের ব্যবস্থা না থাকলে পাখা দিয়ে বাতাস দিতে হবে। এরপর দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হিটস্ট্রোক একটি মেডিক্যাল ইমারজেন্সি। হিটস্ট্রোকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পাশাপাশি তীব্র এই গরমে শিশুদের দেখা দিয়ে থাকে সামার বয়েল। অর্থাৎ গরমকালীন ফোড়া বা গোটার প্রকোপ। সেই সঙ্গে ঘামাচির যন্ত্রণা তো রয়েছেই। গরমজনিত গোটা এবং ঘামাচিতে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। ত্বক নাজুক হওয়ার কারণেই শিশুদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায় এবং অতিসংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী শিশুদের মধ্যে এ সমস্যা আরো প্রকটভাবে দেখা দিতে পারে।
গরমকালীন গোটা এবং ঘামাচির এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শিশুদেরকে যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে রাখতে হবে, সম্ভব হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরমে ঘামাচি এড়াতে অনেকে শিশুকে খালি গায়ে রাখেন, এটা ঠিক নয়। খালি গায়ে রাখলে ঘামাচি আরো বেশি হয়। পাতলা সুতির পোষাক পরিয়ে রাখলে তা ঘাম শুষে নিয়ে ত্বক ঘামাচিমুক্ত রাখার চেষ্টা করে। গরমকালীন এই গোটা মাথায় বেশি দেখা দেয় বলে অনেকেই শিশুর মাথার চুল কামিয়ে ফেলেন। কিন্ত এই চুল কামানোতে কোনো লাভ হয় না। গরমকালীন ফোড়ায় আগাম প্রতিরোধ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ইরাইথ্রোমাইসিন লোশন। ঘামাচি অনেক সময় বড় আকারে দেখা দিলে তখনও ইরাইথ্রোমাইসিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ঘামাচি ও গরমকালীন ফোড়া আকারে বেশ বড় হয়ে গেলে কিংবা পেকে গেলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়েটিক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
শিশুর ঘামাচিতে ক্যালামিলন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ক্যালামিলন লোশন ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। গোসলের আধা ঘণ্টা আগে লোশন সারা শরীরে লাগাতে হবে এবং গোসল করে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দৈনিক দু’বার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ঘামাচির জন্য বহুল ব্যবহৃত প্রিকলি হিট পাউডার ব্যবহারেও উপকার রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে প্রকৃত প্রিকলি হিট পাউডার কিংবা ট্যালকম পাউডার খুঁজে নিতে হবে। ঘামাচি প্রতিরোধে প্রিকলি হিট পাউডার কিংবা ট্যালকম পাউডারও বেশ কাজে আসে।
দুঃসহ এই গরমে শুধু গরম গোটা এবং ঘামাচির প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবলেই চলবে না। পাশাপাশি শিশুকে প্রচুর পানি, ফলের শরবত কিংবা তরল পানীয় পান করাতে হবে। তা না হলে শিশুরা খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment