Saturday, September 3, 2016

সহকর্মীর সার্টিফিকেট পেলেন শাহরুখ

বলিউড কিং খ্যাত অভিনেতা শাহরুখ খান। ভক্তদের কাছে তিনি একজন তারকা। সন্তাদের কাছে একজন আদর্শ বাবা। ব্যক্তি শাহরুখ সম্পর্কে কমবেশি সবই ভক্তদের জানা।



কিন্তু এ অভিনেতার সঙ্গে যারা কাজ করেন তাদের চোখে শাহরুখ কেমন? সেই সম্পর্কে জানিয়েছেন তার সাবেক এক কর্মী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের খুঁটিনাটি সব বিষয় কমবেশি জানিয়ে থাকেন শাহরুখ। কিন্তু তার সম্পর্কে ভক্তদের জানার আগ্রহের যেন শেষ নেই। সেই আগ্রহ থেকে কুওরা-তে (যেখানে কুওরা ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন পাশাপাশি অন্যান্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন) একজন ব্যবহারকারী বলিউড কিং খান ব্যক্তি হিসেবে কেমন সেই সম্পর্কে জানতে চান। আর সেখানে এ অভিনেতার সাবেক একজন কর্মচারী সবকিছুর উত্তর দেন।

এই কর্মচারী এখন শাহরুখের হয়ে কাজ না করলেও এখনো বলিউডে কাজ করেন। সে কারণে নিজের পরিচয় গোপন রেখেছেন তিনি। নিচে সেই কর্মচারীর ভাষায় শাহরুখ কেমন তা তুলে ধরা হলো।

তিনি একজন ভদ্রলোক : তিনি অনেক বড় একজন  তারকা। কিন্তু ২১ শতকে এসেও তিনি আমার মতো প্রায় সব নারী কর্মচারীদের জন্য নিজে দরজা খুলে দেন এবং আগে আমাদের বের হতে দেন।

তিনি কখনো ভক্তদের ভালোবাসা নিতে ভুল করেন না :  প্রত্যেকদিন সকালে যখন গাড়ি নিয়ে বের হন, তিনি জানেন ভক্তরা তার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন। অন্যান্য তারকারা যখন ভক্তদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাড়ির কাঁচের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। সেখানে তিনি কখনো গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে রাখেন না। এবং তিনি হাসিমুখে তাদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ান।

দাতব্য সাহায্যের জন্য শাহরুখের আলাদা ডিপার্টমেন্ট রয়েছে : এই ছোট ডিপার্টমেন্টটি শাহরুখের সকল দাতব্য সাহায্য-সহযোগিতার বিষয় তদারকি করে থাকে। সঠিক সময়ে সাহায্য পৌঁছেছে কিনা এবং সাহায্য পৌঁছাতে সমস্যা রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে। এছাড়া টুইটারে কেউ এ তারকার কাছে সাহায্য চাইছেন কিনা তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করে এই ডিপার্টমেন্ট। এ টিমের কোনো পিআর/এমআর না থাকায় মিডিয়াতে এ খবর কখনো প্রকাশ পায়নি।

তিনি পরিবারের জন্য নিবেদিত প্রাণ : একান্ত প্রয়োজন এবং তাকে না জিজ্ঞেস করে পরিবারের জন্য তার বরাদ্দ সময় আমরা পরিবর্তন করতে পারতাম না। আর তার সন্তানরা যখন ভারতে থাকেন তখন দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় তাদের জন্য বরাদ্দ রাখেন। তখন কোনো কাজ নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি আমাদের ছিল না।

তিনি অত্যান্ত ভোজনপ্রিয় : আমরা দিল্লিবাসীরা সিতা রাম দিওয়ানের ছোলা বাটোরার খুব ভক্ত। একবার দিল্লি থেকে মুম্বাই যাওয়ার সময় এর দুই প্যাকেট আমি  নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি যখন বিষয়টি শুনলেন তখন আমাকে বললেন- ‘দুপুরে খাওয়ার সময় আমি যেন তাকে ডাকি।’ প্রথমে মনে করেছিলাম তিনি হয়তো মজা করে এটি বলছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আমার সঙ্গে ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আমার নেয়া সবটুকু ছোলা বাটোরা খেয়ে ফেলেছিলেন। সাধারণত তিনি ডায়েট করেন কিন্তু সেদিন তিনি কোনো ডায়েট মানেননি।  

তিনি খুবই বিনয়ী : একবার আমি তার ১১ লাখ টাকা দামের জ্যাকেটে আমার কলমের কালি ফেলেছিলাম। তার অ্যাসিট্যান্ট আমাকে মারতে তেরে আসছিল কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যাপার না।’ তিনি আমাকে পাশ থেকে জাপটে ধরেন এবং আমার মাথায় হাত নাড়িয়ে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক হতে বলেন।

বাস্তব জীবনে তিনি অনেক রসিক : যখন তার সামনে ক্যামেরা থাকে না তখন তিনি অনেক মজা করেন। তিনি অনেক ব্যঙ্গ রসিকতা করে থাকেন। আমার মতে তিনি যদি অভিনেতা না হতেন তাহলে খুব ভালো স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হতেন।

তিনি কঠোর পরিশ্রমী : শাহরুখ বছরের বেশির ভাগ সময়ই ভারতের বাইরে থাকেন। কিন্তু আমি যখনই তাকে কাজের বিষয়ে রিপোর্ট করি সব সময়ই তাকে সজাগ পাই। আমি জানি না তিনি ঘুমিয়ে থাকেন না জেগে থাকেন। আমরা তার সঙ্গে থাকার জন্য শিফট করে কাজ করি কিন্তু তিনি সবসময়ই সেখানে থাকেন। তার ব্যবসার সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি সকলকে পাশে রেখে নেন।

তিনি বিদ্বান এবং অনেক কিছুর খোঁজ রাখেন : তিনি যে শুধু শিক্ষিত তা নন, তিনি নিত্য নতুন সব বিষয়ে খোঁজ রাখেন। প্রতিদিন সকালে তার জন্য তিনটি পত্রিকার তিনটি সেট তার পড়ার ঘরে, অফিস এবং গাড়িতে রাখা হয়। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ইন্ডস্ট্রিতে এমন দৃশ্য বিরল। তিনি যখন ভ্রমণ করেন তখন ট্যাবে সব সময় আপডেট থাকেন। আমি প্রায়ই তাকে ই-বুকে বিভিন্ন মানুষের জীবনী পড়তে দেখেছি।

তারকা হওয়ার আগের বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ‍সুসম্পর্ক রেখেছেন : তার ছেলেবেলার অনেক বন্ধু এখনো তার কাছে তার পরিবারের মতো। এদের অনেকেই তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন অথবা এমন হয়েছে তাদের ব্যবসায় শাহরুখ বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি সব সময়ই দেরি করেন : আমি জানি বিষয়টি সবাই জানেন। সকালে যখনই ঘুম থেকে উঠুন না কেন তিনি সব সময়ই দুই ঘণ্টা দেরি করেন। কিন্তু তার যুক্তিতে, এটা সচারচর হয় না কারণ তিনি তার ভ্যানে বিশ্রাম নেন অথবা দেরি করে ওঠেন।  তিনি একের পর এক কাজ করে থাকেন। তিনি যে পরিমাণ কাজ করেন ২৪ ঘণ্টার দিন তার জন্য যথেষ্ট নয়।

‘এক বছর কাজ করার পর আমি শাহরুখের বর্ণনা এভাবেই দিতে পারি। আমি বলে শেষ করতে পারব না কতবার তিনি আমাদের দামী উপহার এবং ট্রিট দিয়েছেন এবং তার টিম এবং তিনি কত মানুষের সাহায্য করেন। তিনি আমার জীবনের সেরা বস ছিলেন এবং থাকবেন।’

No comments:

Post a Comment