৯ মার্চ, ২০১৫ সাল। বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।
ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার
ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। আর ম্যাচটি প্রসঙ্গ আসলেই সবার আগে আসে রুবেল
হোসেনের নাম!
শেষ তিন বলে কি জাদু-ই দেখিয়েছেন বাগেরহাটের এই তারকা পেসার। শেষ ১২ বলে
ইংলিশদের দরকার ছিল ১৫ রান হাতে দুই উইকেট। জয়ের পাল্লাটা ইংল্যান্ডের
দিকেই ঝুঁকে পড়েছিল। কিন্তু রুবেল বল হাতে নিয়ে তিন বলেই দুই ইংলিশ
ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে
পাঠিয়ে দেন। প্রথম বলটি করেছিলেন ১৪২ কিলোমিটার গতি। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে
লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ব্রডের উইকেট। তৃতীয় বলটির গতিও ছিল ১৪০ কিলোমিটারের
উপর। তিন বলের দুর্দান্ত এই স্পেলের জন্য অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রীও অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওই ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু
এরপর সেই আগ্রাসী রুবেলকে আর দলে পায়নি বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গত বছরের এপ্রিলে ৩-০তে সিরিজ জিতলেও নিষ্প্রভ
ছিলেন এই গতি তারকা। তিন ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। একই বছর জুনে
ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আরেকটি সফল ওয়ানডে সিরিজে রুবেল আরও ম্লান। তিন
ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র দুই উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিয়েছেন ৪
উইকেট। এরপর জাতীয় দলের জার্সিতে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলা হয়নি
তার। ইনজুরির কারণে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ খেলতে পারেননি। টি-২০
বিশ্বকাপও মিস করেছেন। তবে ইনজুরিকে বিদায় করে দিয়ে আবারও মাঠে ফিরেছেন
রুবেল। ঘরোয়া লিগে খেলেছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জাতীয় জার্সিতে ফেরার
প্রতীক্ষায় রয়েছেন।
তবে রুবেল ফিরছেন আরও ভয়ঙ্কর রূপে। আগের চেয়ে আরও ক্ষুরধার হয়ে। গতি,
বাউন্স ও ইয়র্কারের সঙ্গে এবার রুবেল তার বোলিং অ্যাকশনের যোগ করেছেন নতুন
অস্ত্র। যার নাম— বাটারফ্লাই। গতকাল নতুন বোলিং ডেলিভারি সম্পর্কে রুবেল
বলেন, ‘এই ডেলিভারি নিয়ে অনেক দিন ধরে অনুশীলন করছি। ওইটা আমার সাইড আর্ম
অ্যাকশনের জন্য এটা করা কঠিন। তবুও আমি চেষ্টা করছি নতুন কিছু আনতে। অফ
কাটার, ইয়র্কার, বাউন্স, গতির সঙ্গে যদি অতিরিক্ত কিছু করতে পারি স্লগ
ওভারে আমার জন্য ভালো হবে।’
বাটারফ্লাই ডেলিভারির বর্ণনা দিতে গিয়ে গতিতারকা বলেন, ‘আঙুলের মাঝে বল
রাখতে হয়। একইভাবে ডেলিভারি হবে। এরপর সেটা পড়ে নিচু হয়ে ধীর গতিতে যাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যাঙ্গেভেল্ট, ভারতের জহির খান করেছেন। এটা কাজে লাগাতে
পারলে ভালো হবে।’
ইনজুরি থেকে ফেরার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ বোলিং করেছেন। প্রাইম
ব্যাংকের হয়ে ১৫ ম্যাচে ১৯ উইকেট পেলেও রুবেলের বোলিং লিগে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
নিজের বোলিং সম্পর্কে রুবেল বলেন, ‘আমার মূল শক্তি হচ্ছে জোরে বোলিং করা,
ইয়র্কার দেওয়া। বোলিংয়ে গতি বাড়াতে অনেক পরিশ্রম করছি। আগের গতিটা ফিরে
পাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও আমার মনে হয় না গতি কমেছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে
মনে হয়েছে ভালো গতিতেই বোলিং করেছি।’
নতুন বোলিং ডেলিভারি নিয়ে নিজে নিজে কাজ করছেন রুবেল। সে কারণেই তার
জন্য একটু কঠিনই হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমানে পেস বোলিং কোচ না থাকায়
সমস্যার কথাও জানালেন। রুবেল বলেন, ‘আমাদের জন্য পেস বোলিং কোচ থাকাটা
দরকার। যখন একজন কোচ থাকবেন তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। নতুন নতুন
টিপস আমাদের অনেক কাজে লাগে।’
নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে এই পেসার বলেন, ‘আমি কঠোর অনুশীলন করছি। যাতে দলে
আমার সেরাটা দিতে পারি। দলের হয়ে ভালো কিছু করতে পারি।’ ইংল্যান্ডে
কাউন্টি খেলতে গিয়ে আবারও ইনজুরিতে পড়েছেন দেশসেরা পেসার মুস্তাফিজুর
রহমান। কাটার মাস্টার সম্পর্কে রুবেল বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে
মুস্তাফিজ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি অন্য রকম এক বোলার। তার সুস্থ
হওয়াটা খুবই জরুরি। আমি মনেপ্রাণে চাই ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। ওকে
বাংলাদেশ দলে এখন খুবই দরকার।’
এক সপ্তাহের ক্যাম্প পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন সাবেক পাকিস্তানি
পেসার আকিব জাভেদ। হাইপারফরম্যান্স দলের পেসারদের নিয়ে কাজ করছেন আকিব, তবে
শেষের দুই দিন তিনি জাতীয় দলের পেসারদের নিয়ে কাজ করবেন। পাকিস্তানের
সাবেক বোলারের কাছে রিভার্স সুইংয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মুখিয়ে
রয়েছেন রুবেল। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা সুইংয়ের দিক থেকে সব সময়ই আলাদা।
বিশেষ করে রিভার্স সুইং তারা খুব ভালো করে। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার
থাকবে।’
No comments:
Post a Comment